mvBUwU wfwRU Ki‡Z †Kvb cÖKvi mgm¨v †`Lv w`‡j ev †Kvb wjs‡K cÖ‡ek Ki‡Z bv cvi‡j- Help Line +88 01914 142057
.................................Thank you........................................ For .......................................... Visiting ....................................... Our Site........................

Tuesday, June 5, 2012

প্রতিবেদন

আমরা এবং আমাদের শিশুরা এক ভয়ংকর ফাদেঁ পা বাড়াচ্ছি! পরাধীনতার যন্ত্রনা ইরাক, ফিলিস্তিন থেকে আমরা অনুভব করতে পারি কি?

হিন্দি সিরিয়ালের মাধ্যমে চলছে বাঙ্গালী নারী ও শিশুদের হিন্দি ভাষা চর্চা ও হিন্দি সংস্কৃতি । যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উপর পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে রাষ্ট্রের মূলে আঘাত করার কৌশল হিসেবে ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম এ তিনটির উপর আঘাত করা একান্ত জরুরী। বর্তমানে একটা দিনমুজুর ঠিক মতো বাংলা পড়তে না পারলেও খুব সহজেই হিন্দি বলতে পারে। বাংলা কথার মাঝখানেই তারা হিন্দি ঢুকিয়ে দিচ্ছে। রাস্তাঘাটে বের হলে দেখা যায় যে সব বাচ্ছারা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় তাদের প্রায় সবাই হিন্দি গান বলছে। বস্তিগুলো হয়ে ওঠেছে হিন্দির সিনেমা হল। ছোট ছোট বাচ্চারাও এখন হিন্দি সিরিয়ালের দিকে মনোযোগী হয়ে উঠেছে। বাচ্চারা তার মার সাথে বোনের সাথে খুব আগ্রহ নিয়ে দেখছেন এই হিন্দি সিরিয়াল গুলো। ছোট বাচ্চাদেরও হিন্দি বলতে দেখা যায়। অথচ বাচ্চারা ঠিক মতো এখনো বাংলাই জানে না। একদিন হিন্দি সিরিয়াল না দেখতে পারলে ঐ দিনের খানাই হজম হয় না মেয়েদের।

এই সিরিয়াল গুলোর কাহিনী নিয়ে মেয়েদের মধ্যে চলে গুরুত্যসহকারে আলোচনা। আবার ফেসবুকে অনেক বাঙ্গালী মেয়েদের প্রফাইলে দেখা যায় তিনি তার language শুধু হিন্দি দিয়ে রেখেছেন। হয়তো সাথে বাংলা দিতে লজ্জা পান।। status ও দিচ্ছে হিন্দিতে এবং হিন্দি পারাটাও তারা গর্ব হিসেবে মনে করেন। প্রতিদিনই তারা খাবার হিসেবে বেছে নিচ্ছেন কাল্পনিক হিন্দি সিরিয়াল গুলো। যেই সিরিয়াল গুলোর মধ্যে দেখাযায় একটি ফ্যামিলী নিয়ে নানান কাল্পনিক কাহিনী।


বউ সাশুরী বিরোধ,স্বামী স্ত্রী বিরোধ। এই সিরিয়াল গুলো দেখেই তারা শিখছেন কিভাবে বউ শাশুরীকে শায়েস্তা করে, শাশুরী বউকে কিভাবে শায়েস্তা করে, কিভাবে স্বামীর অজান্তে পরকীয়া করে, কিভাবে ভাইয়ে ভাইয়ে বিরোধ হয়,বউয়ে বউয়ে যুদ্ধ হয়। তা খুব সহজেই শিখে নিচ্ছেন। এগুলো দেখে শিখার কারোনেই সেগুলোকে বাস্তবে রূপ দিচ্ছে বাঙ্গালী নারীরা আর সে কারনেই সংসারে হচ্ছে চরম অশান্তি। একান্নবর্তী পরিবার গুলো হয়ে যাচ্ছে single ফ্যামিলী। আর সেই কারনেই ফ্যামিলীর সবার মধ্যে হয়ে যাচ্ছে দুরত্য। ছোট ছোট বাচ্চারা এগুলো শিখে বড় হচ্ছে।


হিন্দি সিরিয়ালের মাধ্যমে ইন্ডিয়া অশ্লীলপোশাক আশাকেও ছড়িয়ে পড়ছে বাঙ্গালী মেয়েদের গায়ে। অশ্লীল সেই পোশাক পড়েই রাস্তায় বেরিয়া যাচ্ছে মেয়রা।, এতে অধিক হাড়ে বেরে যাচ্ছে ইভটিজিং এর মত অপরাধ। হচ্ছে মেয়েরা ধর্ষিত যেখানে সেখানে। হিন্দি সিরিয়ালের বিরোদ্ধে এখন থেকে আন্দোলন গড়ে না তুললে নারীরা আরও ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। এর জন্য হিন্দি চ্যানেল স্টার প্লাস, জিটিভি মত এই জাতীয় হিন্দি চ্যানেল গুলোর বন্ধের জোড় দাবী জানাচ্ছি।



শিশুর আচরণের উপর মিডিয়ার প্রভাব, শিশুর নৈতিকতা এবং অভিভাবকত্ব
 দেশের বাচ্চারা মারাত্মক আসক্ত হয়ে পড়েছে, এনিমেশন সিরিয়াল দোরেমনের প্রতি এবং যার ফলশ্রুতিতে বাচ্চারা আকছাড় হিন্দি বলছে, পাশাপাশি বাচ্চারা অনেক অনৈতিক কাজও করা শিখছে। যেমনঃ কার্টুনের একটি চরিত্র নবিতা মিথ্যা বলে, তাই বাচ্চারাও মিথ্যা বলছে।

দোরেমন এনিমেশন সিরিয়ালটি মূলতঃ একটি জাপানিজ এনিমেশন। যার আসল নাম ডরায়মন, যেটি হিন্দিতে হয়ে গেছে দোরেমন। দেশের অনেকেই শংকা প্রকাশ করছেন, বাচ্চাদের হিন্দি শেখা নিয়ে। কারণ এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। তবে আশার কথা এই যে, যেহেতু তারা হিন্দি লিখতে এবং পড়তে শিখছে না, সেহেতু হিন্দি বিরোধী অনুকূল পরিবেশ পেলেই তারা আবার তা ভুলেও যাবে। বাচ্চারা তো আসলে নিজেরা নিজেদের ভালো মন্দ বোঝেনা। তারা নিজেরা বুঝে কোন যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা। তাদের শিক্ষাই শুরু হয়, তাদের পরিবার, স্কুল এবং তাদের পারিপর্শ্বিক অবস্থা থেকে। তারা তাদের সামনে যা দেখে তারই অনুকরন করে মাত্র। কাজেই বাচ্চারা যদি ঝরঝরে হিন্দিতে কথা বলে, অথবা কার্টুন দেখে, বন্ধুদের সাথে মারামারি করে, বা হিরো সাজার জন্য এক ছাদ থেকে লাফিয়ে আরেক ছাদে পড়তে যায়, অথবা মুড়ি-মুড়কির মত মিথ্যা বলে, তাহলে এটাতে চমকে ওঠার কিছু নেই। শিশুদের জন্য এটাই স্বাভাবিক।
আমি বলব, বাচ্চারা শুধু কার্টুন দেখেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, আমেরিকান একটা গবেষণায় দেখা গেছে, বাচ্চা শিশুতোষ প্রোগ্রাম দেখে মাত্র ১০ ভাগ আর ৯০ ভাগ দেখে বড়দের জন্য তৈরী করা প্রোগ্রাম। আমি মনে করি, বাংলাদেশেও তার ব্যাতিক্রম নয়। হিন্দি বলা কিম্বা মিথ্যা বলা তো শুধু বাচ্চারা দোরেমন দেখে শিখছে না। শিখছে হিন্দি গান, হিন্দি সিনেমা, হিন্দি সিরিয়াল এ সব থেকেও।
কিন্তু আমার মনে হয়, আমাদের শংকিত হবার, বিচলিত হবার, মনোযোগ দেবার জায়গাটি ভিন্ন, সেটি হল- বাচ্চাদের নৈতিক আচরণের বিকাশটা ঠিক মত হচ্ছে কিনা? শিশুর নৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে আমাদের এখনই সচেতন হওয়া ভীষন জরুরী। আমার একান্ত ব্যাক্তিগত মতামত হল, আমাদের ইতমধ্যেই অনেক দেরী হয়ে গেছে। কারণ সুস্থ নৈতিক বিকাশ, শিশুদের সব ধরণের অনৈতিকতা অনেক খানি কমিয়ে এনে তাদের সুস্থ, স্বাভাবিক ও সৎ জীবন যাপনে সাহায্য করে। যেমনঃ যে বাচ্চাটা দূর্দান্ত হিন্দি বলছে, তাদের কি কখনো শেখানো হচ্ছে, তোমার  হিন্দির দক্ষতাটার চেয়ে অনেক বেশী জরুরী নিজের মাতৃভাষা এবং ইংরেজিভাষাটাকে ভালোভাবে জানা বা শেখা। অথবা মিথ্যা বলাটা কোন ভালো কাজ নয়।
এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। ডরায়মন কিন্তু জাপানিজ বাচ্চাদের মধ্যেও অনেক জনপ্রিয়। কিন্তু এটি তাদের মধ্যে কোন নৈতিক সংকট তৈরী করেনি। কারণ জাপানিজ শিশুদের নৈতিক আচরণ বিকাশের ক্ষেত্রে বাবা-মা সহ তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুব শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে। উন্নত বিশ্বেও শিশুর আচরণের উপর মিডিয়ার প্রভাব একটা বড় সমস্যা। কিন্তু উন্নত দেশের নৈতিকতা শিক্ষার বিষয়টিও অনেক শক্তিশালী।

শিশুদের নৈতিক অধঃপতন কিন্তু শুধু ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জন্যই ঘটছে, তা কিন্তু নয়। কারণ মিডিয়া অনেক ক্ষেত্রেই শিশুদের জন্য বিশেষ ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। শিক্ষামূলক বা মান সম্পন্ন শিশুতোষ অনুষ্ঠানগুলো যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
শিশুর নৈতিক অধঃপতন তার সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, শিশুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তার পিয়ার গ্রুপ এবং দারিদ্র, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সর্বোপরি বাবা-মা’র এবিউসিভ পেরেন্টিং এবং মিস গাইডেন্সের জন্যও ঘটে থাকে।
একটা সামান্য ভুলের জন্য শিশুকে শিক্ষক শাস্তি দিচ্ছেন, তার সমবয়সীদের সামনে বিশ্রীভাবে অপমান করছে। বাড়িতে ফিরেও শিশুটি তার ভুলের জন্য শাস্তি পাচ্ছে। তাহলে শিশুটি শাস্তি এড়ানোর জন্য মিথ্যা বলবে, এটা একটা শিশুর জন্য যেমন স্বাভাবিক তেমনি, শিশুটির নৈতিক বিকাশ যদি ঠিকভাবে না হয়ে থাকে অথবা বাবা-মা যদি বিষয়টি ঠিকভাবে হ্যান্ডল করতে না পারেন, শিশুটি নিজেই শুধু মিথ্যা বলবে না, আরো বড় ধরণের অপরাধ করতে পারে।


একটি রাস্ট্র বা সমাজ শিশুদের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিতে ব্যার্থ হলে, আসলে সব দায়-দায়িত্ব গিয়ে বাবা-মা’র উপরেই বর্তায়। যদিও এটা বাবা-মা’র জন্য এটা একটা বিশাল সামাজিক চাপ। তবুও বলতেই হবে, এক মাত্র বাবা-মাই পারেন শিশুর নৈতিক এবং আবেগীয় বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা রাখতে।

বাবা-মা’ কি কি করতে পারেন?
শিশুদের নৈতিক বিকাশের একটা অন্যতম উপায় হল তাদের সাথে বিভিন্ন ধরণের নৈতিক খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচলা। শিশুটি যে প্রোগ্রামটি দেখছে, কি ভাবে দেখছে, এসব নিয়ে আলোচনা করলে, ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
দোরেমনের নবিতা মিথ্যা বলছে কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, কোন বাচ্চা যদি সত্যি সত্যি স্কুলে মিথ্যা বলতে শেখে, তাহলে কি হবে? কিম্বা তুমি যদি আমার সাথে মিথ্যা বল, তাহলে কি হবে? জিজ্ঞাসা করুন আপনার শিশুকে। শিশুর কাছে থেকে বার বার জেনে নিন, তুমি যে প্রোগ্রামটা দেখছ - তাতে সেখানে ওরা কি ভাবে সমস্যার সমাধান করছে? তারপর জিজ্ঞাসা করুন, এই সমস্যটা আরো কি বাস্তব সম্মতভাবে এবং নৈতিকতা বজায় রেখে, কোন সংঘাতে না গিয়ে ভালোভাবে সমাধান করা যায়? শিশুর সাথে গুণগত সময় কাটানো এবং আলোচনার কোন বি্কল্প নেই।
একটি বাচ্চা রোজ ৪ ঘন্টা টিভি দেখলে সপ্তাহে সে টিভি দেখে ২৮ ঘন্টা। বাবা-মা কি সময়টা কখনো খেয়াল করেছেন? বিকল্প আকর্ষনীয় ব্যাবস্থা করে সময়টা কমিয়ে আনা জরুরী।
টিভি দেখা বা ভিডিও গেমস খেলার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম বেধে দেওয়া খুব জরুরী।
বাবা-মা’ অবশ্যই জানা থাকা প্রয়োজন, যে বাচ্চারা কোন প্রোগ্রামটা দেখছে। যেমনঃ বাবা-মা নিজেই যদি কাহানি ঘর ঘর কি, কাভি শাস কাভি বহু থি তে আসক্ত হন, আর সেটা যদি শিশুরাও দেখে, তাহলে আমি নিশ্চিত বলে দিতে পারি, দোরেমন না দেখলেও দেশের শিশুরা মিথ্যা বলতে বা জটিল ভাবে ভাবতে শিখবে। পাশাপাশি বাচ্চা যে প্রগ্রামটি দেখছে, সেটী বাচ্চার পাশে বসে বাবা-মা’র দেখাটাও জরুরী। তাতে আলোচনা করে অনুষ্ঠান্টির মোর‌্যাল পার্সপেক্টিভ বাচ্চাকে ভালোভাবে বোঝানো সম্ভব।
কাজের লোকটির সাথে বসে ২ থেকে পাঁচ বছরের শিশুরা টিভি দেখছে কি না, কিম্বা বাবা-মা নিজেই যখন ভয়াবহ ব্যাস্ত সেই ফাঁকে বাচ্চা যা খুশী তা দেখছে কি না সেটি সম্পর্কে বাবা-মা’র সচেতন হওয়া খুবই প্রয়োজন।
টিভি যেন কিছুতেই শিশুদের এক মাত্র বিনোদন না হয়।
বই পড়া, ছবি আঁকা, গল্প শোনানো, আরো যে সব বিষয়ে বাচ্চার আগ্রহ আছে, সেগুলো শিশুদেরকে উতসাহিত করা জরুরী।
শিশুরা কি কি অনুষ্ঠান দেখবে এবং সে গুলো মানসম্মত কি না, সেটা বেছে নেওয়া অনেক জরুরী।
যে সব অনুষ্ঠান বাচ্চাদের ক্ষতি করতে পারে বলে, ভাবছেন তা অবশ্যই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। যেমনঃ সারাদিন স্যাটালাইটের মাধ্যমে "শীলা কি জওয়ানি" না চালিয়ে, "কাহানি ঘর ঘর কি" অথবা "কার্টুন নেটওয়ার্ক" না দেখার বদলে, বাবা-মা’ রা নিজেরাও ভালো কোন ছবি সংগ্রহ করে দেখতে পারেন নিজের সুবিধা মত সময়ে আবার বাচ্চাদের জন্য কিনে আনতে পারেন কোন ক্লাসিক কার্টুনের ভিডিও।
সব বাবা-মা একটি সামাজিক চাপ তৈরী করতে পারেন, সরকারকে বা টিভি চ্যানেল গুলোকে বাধ্য করতে পারেন, যেন বাচ্চাদের উপযোগী মান সম্পন্ন প্রোগ্রাম বেশী বেশী করে তৈরী করা হয়।
সমাজে সকল বাবা-মা’র সম্মিলিত প্রচেষ্টা সৃষ্টি করতে পারে শিশুর উপযোগী নতুন পথ।

 

'মীনা'.... নাকি 'ডোরেমন' ???কোনটা আগে গ্রহণীয় এবং কেনো...(একটি সাধারন পর্যালোচনা)

মীনা- আমাদের দেশের অ্যানিমেশন বা কার্টুন জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি নাম।
একসময় আমাদের দেশের বাচ্চা থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত সকলেই মীনা কার্টুনটির একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলো। এখনও আছে তবে সেটা হয়তো আগের অবস্থানে নেই। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, গ্রামের সাদাসিধা মেয়ে মীনা এবং তার বাংলা-বুলি, বর্তমান ডিজুস যুগের বাচ্চাদের কাছে অনেকটাই অবহেলিত।

স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো যেদিন থেকে আমাদের দেশে সহজলভ্য হয়ে গেছে সেদিন থেকেই মূলত মীনা কার্টুনটি তার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মীনার জায়গা দখল করে নিয়েছে জাপানীদের তৈরি 'ডোরেমন' নামক কাল্পনিক এক রোবোট বিড়াল।
একটা সময় ছিলো যখন বাচ্চারা মীনা ছাড়া কিছু বুঝতো না, এখন সেই বাচ্চারাই ডোরেমন ছাড়া কিছু বোঝে না।

ডোরেমন এবং হিন্দি ভাষার প্রবনতা-
'ডোরেমন' জাপানি কার্টুন হলেও ভারতীয়রা একে হিন্দিতে ডাবিং করে 'নিক' চ্যানেলের মাধ্যমে আমাদের দেশের বাচ্চাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। তারা এখন ডোরেমনের প্রেমে এতোটাই মশগুল যে, বাংলা ভুলে যেয়ে এখন তারা অনর্গল হিন্দিতে কথা বলে যেটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। যে ভাষার জন্য এতো যুদ্ধ, এতো আত্মত্যাগ,- সেই ভাষাই যদি আগামী প্রজন্মের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা হারায়, তাহলে এর চেয়ে বড় লজ্জা, কি হতে পারে? এসব ব্যাপার চিন্তা করতে হবে।


এজন্য কারা দায়ী-
বাচ্চাদের কিন্তু এখানে কোন দোষ নেই কারন, বাচ্চারা সবসময়ই অনুকরনপ্রিয় এবং নতুনের দলে। তারা সেটাই গ্রহন করবে যেটা তাদের ভালো লাগবে। একটা সময়ে, এমন কোন বাচ্চা খুজে পাওয়া যেতো না যে কিনা মীনা কার্টুন পছন্দ করেনা বা দেখেনি। আর এখন- আমি নিজে এমন অনেক বাচ্চাদের দেখেছি যারা মীনার নামটা পর্যন্ত শোনেনি। এর জন্য দায়ী আমরাই কারন, আমরা তাদের সামনে মীনাকে উপস্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করিনি। অনেক বাবা-মায়েরা ভাবে- তাদের বাচ্চা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ে, মীনা দেখে কি করবে? তারচেয়ে ইংলিশ মুভি দেখলে ইংলিশের চর্চাটা ভালো হবে। হিন্দি ডোরেমন দেখলেও সমস্যা নেই। ডোরেমনের কারনে তারা যে হিন্দি শিখছে সেটাতে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। কারন, আমাদের সুশীল সমাজ কিন্তু বর্তমানে হিন্দি ভাষাটাকে একটা স্মার্ট ভাষা হিসেবেই গ্রহন করে নিয়েছে। হিন্দি বলাটা বর্তমানে একটা Passion- তাদের কাছে এখন হিন্দি ভাষাটা এবং সংস্কৃতিটা অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউনিসেফ যেখানে মিনাকে একটি আইকন হিসেবে সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে সেখানে আমরা নিজেরাই এর সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছি না। নিজস্ব সংস্কৃতির আদলে নির্মিত মীনাকে বাচ্চাদের কাছে সঠিকভাবে তুলে না ধরে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নিয়ে লাফালাফি করছি আমরা। ফলাফল, সবার চোখের সামনেই।


মীনা কার্টুনের প্রয়োজনীয়তা-
এশিয়ার বিভিন্ন ভাষায় নির্মিত একটি জনপ্রিয় টিভি কার্টুন- মীনা। এর কমিক বইও আছে। বাংলা ভাষায় নির্মিত কার্টুনগুলোর মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র মীনা। দক্ষিন-এশিয় দেশগুলোতে বিভিন্ন সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক একটি অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে UNICEF -এর সহায়তায় এই কার্টুন ধারাবাহিকটি নির্মিত।
মীনা কার্টুনের প্রত্যেকটা পর্বে জনসচেতনতামূলক অনেক বার্তা রয়েছে যা আমাদের সমাজ তথা, সমাজে বসবাসরত সকল পর্যায়ের মানুষ, ধনী-গরিব, ছোট-বড় সকলের জন্য সমানভাবে প্রয়োজনীয়।

যৌতুক প্রথা, ইভ-টিজিং, বাল্য-বিবাহ, ছেলে-মেয়ের সমান অধিকার, সবার জন্য শিক্ষা, সমাজে মেয়েদের প্রয়োজনীয়তা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, শিশুশ্রম, মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব, শিশুপাচার,- এরকম আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলো উঠে এসেছে মীনা কার্টুনে যা কিনা বাচ্চা-বুড়ো সকলেরই নৈতিক চরিত্র গঠনে বেশ জোরালো ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। কথা আসতে পারে- বাচ্চাদের জন্য এখনই এসব নৈতিক শিক্ষার দরকার আছে কিনা?

-হ্যাঁ, অবশ্যই আছে।
মনে রাখতে হবে, বাচ্চাদের মধ্যে যেটার অনুপ্রবেশ প্রথমেই ঘটানো দরকার সেটা হলো- বাস্তবতা সম্পর্কে ধারনা, নৈতিক জ্ঞান। এ ব্যাপারগুলো তারা প্রথমে হয়তো সেভাবে বুঝবেনা তবে প্রথম থেকেই তাদের মধ্যে এসব সম্পর্কে ধারনা ঢুকিয়ে দিলে পরবর্তীতে যখন তারা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকবে, এ ব্যাপারগুলো তাদের মধ্যে আরও জোরালো এবং মজবুত হয়ে উঠবে, যেটা ভবিষ্যতের জন্য অনেক প্রয়োজন। এ কাজটি কিন্তু মীনা কার্টুনের কল্যাণে অনেকটাই সম্ভব।

মীনা কার্টুনের পর্ব তেমন বেশি নেই। সম্প্রতি নতুন কিছু পর্ব তৈরি করা হলেও বেশীরভাগ সময় একই পর্ব ঘুরে ফিরে প্রচারিত হয়। বাচ্চাদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলার এটাও একটা কারন হতে পারে। তবে, বাচ্চাদের কাছে যদি আমরা একে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি, বাচ্চারা যদি ডোরেমনের মতো মীনাকে গ্রহন করে, তাহলে আশা করা যায় UNICEF- এ ব্যাপারে নজর দিবে এবং পর্ব বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকবে। কারন, চাহিদা না থাকলে বানানোটাই বৃথা।

আমাদের যা করনীয়-
ডোরেমনের কারনে বাচ্চাদের মধ্যে হিন্দি বলার প্রবনতা বেড়ে গেছে ঠিকই তবু এটা বলবো না যে, বাচ্চাদের ডোরেমন দেখা বন্ধ করে দেয়া উচিত। কারন সেটা সম্ভবও না। কাল যদি ডোরেমন প্রচার বন্ধ হয়ে যায়, হাজার হাজার বাচ্চা এক হাতে ফিডার আরেক হাতে ঝাড়ু নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়বে, শিশু-বন্ধন করবে, প্রেস- কনফারেন্সও করার সম্ভাবনা আছে (একটু মজা করলাম )
অবশ্য তাদের দলে যে প্রাপ্তবয়স্ক কিছু ব্যাক্তিবর্গও থাকবে- সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। সুতরাং, এটা কোন সমাধান নয়।
আমাদের যা করতে হবে-

• বাচ্চাদের কাছে অবশ্যই প্রথমে মীনা কার্টুনকে উপস্থাপন করতে হবে। ডোরেমন পরে দেখলেও ক্ষতি নেই তবে, তারা যেনো মীনাকেই প্রথমে গ্রহন করে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে বাবা মা'র ভূমিকা মুখ্য।

• সম্প্রতি ডোরেমন বাংলায় ডাবিং করা হচ্ছে। বাবা-মার উচিত হবে, তাদের বাচ্চাদের জন্য বাংলা ডাবিংকৃত ডোরেমনের সিডি কিনে সেগুলো তাদেরকে দেখানো। এতে হিন্দি ভাষার ছোবল থেকে তারা মুক্তি পাবে। বাংলায় ডাবিং করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে, যারা এসকল বিষয়ের সাথে জড়িত। (বড় কোন প্রতিষ্ঠান নিজ দায়িত্বে এগিয়ে আসলে ভালো হয়।

শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা-
আমি যেটা বুঝি তা হলো, মীনা কার্টুনের জগতটি সম্পূর্ণ লজিক্যাল বা বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে নির্মিত; আর ডোরেমনের জগতটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক/স্বপ্নরাজ্যের উপর নির্মিত। বাচ্চাদের জন্য দুইটারই প্রয়োজন রয়েছে। কল্পনা তাকে বেড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখাবে, বাস্তবতা তাকে শেখাবে- কিভাবে সে বেড়ে উঠছে।
কল্পনা এবং স্বপ্নরাজ্যে বাচ্চারাই বিচরণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। আর এজন্যই তাদের কাছে ডোরেমনের এতো চাহিদা। তবে এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, বাস্তবতাই কিন্তু তার কাছে আগে ধরা দেবে। কোন বাচ্চার যদি স্কুলের হোমওয়ার্ক করতে ভালো না লাগে, অলসভাবে বসে থাকে এবং ভাবে যে ডোরেমন এসে তার হোমওয়ার্ক করে দিয়ে যাবে- তাহলে সেটা কোনদিনও সম্ভব হবে না। বরং, তার উচিত হবে কল্পনার জগত থেকে বেরিয়ে এসে হোমওয়ার্কটা করে ফেলা। কারন, এটাই বাস্তব। আর এ বাস্তবতার কথা বলে মীনা। কল্পনার প্রয়োজন অবশ্যই আছে তবে সেটা, বাস্তবতার আগে নয়। সুতরাং, এবার আপনিই ঠিক করুন- আপনার আগামী প্রজন্মের সামনে আপনি কোনটাকে আগে উপস্থাপন করতে চান- কল্পনার জগত, নাকি----বাস্তব জগত???

No comments:

Post a Comment

evsjv‡`k


we‡`kx Pµv‡šÍi weরু‡× `~ev©i , AcÖwZ‡iva¨ mvgvwRK Av‡›`vjb M‡o Zzjyb| †`k evPu‡j Avcbvi mšÍvb evPu‡e|we¯ÍvwiZ Rvb‡Z...